ফটোফ্রেম

ফটোফ্রেম
-রাখী চক্রবর্তী

 

বিদুনদা কাঠের মিস্ত্রি। নতুন বাড়ি তৈরি হলেই বিদুনদার ডাক পড়ে।
একদিন দুই কর্মচারীকে নিয়ে পাশের গ্রামে রওনা দিল বিদুনদা। খাট,জানলা, আলমারি সবই বানাতে হবে। দু’দিন থাকতেও হবে ওখানে ।
যাইহোক,ওখানের পৌছেই যে যার মতো কাজে লেগে পড়ল।

এবার বিদুনদা বাথরুমে যাবে হঠাৎ ই দেখল বাথরুমের সামনে 12-13 বছরের একটি রোগা পাতলা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। বিদুনদা তাকে দেখে চমকে উঠল।
কে কে তুমি?
ছেলেটা বলল, একটা ছবির ফ্রেম বানিয়ে দাও। এইটাও আমার বাড়ি। সামনের বাড়িতে আমি থাকি।
বিদুনদা বলল, ও তুমি প্রাণকেষ্ট বাবুর ছেলে? ছেলেটি বলল, হ্যাঁ।

যথারীতি কাজ সেরে বিদুনদা ঘরে এসে দেখে কর্মচারি দু’টো নেই। ঐ ছেলেটা আবার এল, এসে জানলার পাশের দেওয়ালটাতে ফেমের মাপ দিয়ে বলল, এই মাপে ফ্রেম বানাও। আমার ছবি লাগাব।
বিদুনদা হেসে বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছে, তা তুমি কোন ক্লাসে পড়ো?
এর মধ্যে কর্মচারি দু’টো এসে বলছে, কি দাদা কার সাথে কথা বলছো?
-এই দ্যাখ না প্রাণকেষ্ট বাবুর ছেলে বলতে বলতেই উধাও ছেলেটা।
কোথায় গেল? এখানেই তো ছিল।
কর্মচারি বলল, কে এসেছিল, প্রাণকেষ্ট বাবুর ছেলে। ও আচ্ছা।

দুপুরে খাবার খেয়ে ওরা বিশ্রাম নিচ্ছে। আর বিদুনদা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। রান্নাঘরের ভেতর থেকে জলের শব্দ শুনতে পেয়ে ভেতরে গিয়ে বিদুনদা দেখল ছেলেটা বেসিনে হাত ধুচ্ছে। চোখ দু’টো যেন কেমন কেমন।
যাইহোক বিদুনদা বলল, কি নাম তোমার? এই ফাঁকা বাড়িতে কি করছ? ছেলেটি বলল, সুরেশ আমার নাম। ফাঁকা বাড়িতে থাকতে আমার ভাল লাগে।
বিদুনদা র কেমন যেন লাগছে ওর চোখ দু’টো লাল কেমন যেন।
কাজ করে কর্মচারি দু’টো বিকেল বেলায় চা আনতে গেল ।
ঠিক তখনই সুরেশ এসে বলছে, ফ্রেমটা এখনো বানালে না।
বিদুনদা, কি মুশকিল আগে এগুলো করে নি কাল বানাবো তোমার ফটোফ্রেম ।
সুরেশের চোখ যেন জ্বলে উঠল বেশ রেগেই বলল সন্ধ্যাবেলার মধ্যেই চাই।
বিদুনদা ঘেমে চান হয়ে গেছে। ঘাম মুছতে মুছতে চোখ তুলেই দ্যাখে সুরেশ উধাও
ওরা চা নিয়ে এল। সবাই চা খেল। ওরা ওদের মতো কাজ করছে। বিদুনদা খাটের পায়া লাগাচ্ছে একটু নিচের দিকে তাকাতেই বিদুনদা দেখল সুরেশ রক্ত বর্ণ চোখ করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আর বলছে এখুনি ফ্রেম বানাও, নইলে, বিদুনদার চিৎকার শুনে ওরা এসে বলল কি হয়েছে।
বিদুনদা বলল, কি মুশকিলে পড়েছি। ছেলেটা জ্বালিয়ে মারছে।
কর্মচারিটা বলল, কেউ তো এখানে নেই। কি ভুলভাল দেখছো।
রাত সাতটার সময় প্রাণকেষ্ট বাবু এল। বিদুনদার সাথে দেখা করতে। এসেই বললেন,বিদুন এই ছবিটার জন্য একটা সুন্দর ফ্রেম বানিয়ে দাও।
বিদুনদা বলল, হ্যাঁ যা তাড়া দিচ্ছে আপনার ছেলে। এই এখুনি বানাবো।
প্রাণকেষ্ট বাবু বললেন মানে- বিদুনদা বলল, সেই সকাল থেকে আমার পেছনে লেগে আছে সুরেশ ফ্রেম বানানোর জন্য।
প্রাণকেষ্ট বাবু অবাক হয়ে বলছেন কি বলছো?
বিদুনদা বলল, সুরেশ বাড়ি চলে গেল? ও যে বলল ফ্রেমটা দেখে বাড়ি যাবে।
প্রাণকেষ্ট বাবু চোখে জল নিয়ে অস্পষ্ট ভাবে বললেন এক অজানা জ্বরে আট মাস আগেই সুরেশ মারা গেছে।
বিদুনদা সেই যে অজ্ঞান হল ভোর বেলায় জ্ঞান ফিরে দ্যাখে সে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। গায়ে তার প্রবল জ্বর ।

Loading

Leave A Comment